বিএনপি কিভাবে জনপ্রিয়তা পেল?

কোন গণ আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি'র জন্ম হয়নি। এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান'র ঐতিহাসিক নেতৃত্বের ভূমিকারও বড় নজির নেই। কিন্তু তবু নির্বাচনী রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের সমান্তরালে তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। তাকে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত বড় অংশের মানুষ।
যদিও, ভোটের সংখ্যা যে জনমতের সত্যিকার প্রতিফলন সবসময় হয় না, সেটা বিবেচনায় রাখা দরকার। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশে আরেক দলের উপর গোস্বা করা, ধর্ম বা টাকার প্রভাবে পড়া, হুমকির মুখে থাকা ইত্যাদি নানা ফ্যাক্টর নির্বাচনের দিন কাজ করে। কিন্তু তবু যে কারণেই হোক, ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ভোটের অংশীদারত্ব যে বিএনপি'র আছে, সেটা ইতোমধ্যে প্রমাণিত।
বিএনপি'র এই উত্থান, ক্রমবিকাশ এবং যাবতীয় প্রতিকূলতার পরেও বড় দল হিসবে টিকে থাকা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা দাবি করে।
বিএনপি'র আজকের অবস্থান কিভাবে মানুষকে টানল, সেটা বোঝার জন্য আমরা ইতিহাসকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে নিতে পারি-

- ১। বিএনপি'র জন্মের সময়কাল
- ২। জিয়াউর রহমান'র সময়ে বিএনপি
- ৩। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি
- ৪। সরকার হিসেবে বিএনপি
- ৫। মইন ইউ আহমেদর সময়ে বিএনপি
- ৬। আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি
১। বিএনপি'র জন্মের সময়কাল
বিএনপি যখন জন্ম নিল, তখন দেশে রাজনীতিবিদরা দিশেহারা, অর্থনীতি ছিন্নভিন্ন।
মাত্র তিন বছর আগেই সপরিবারে নিহত হয়েছেন শেখ মুজিব। স্বাধীনতার পরে দোর্দন্ড প্রতাপে দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ বেসামাল। ভাসানি ন্যাপ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। সামরিক বাহিনীতে মাত্র শৃঙ্খলা ফিরছে মেজর জেনারেল জিউয়ার রহমান'র প্রশ্নবিদ্ধ কঠোর নানা পদক্ষেপে।
৭৪ এর ভয়ানক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে মানুষের হয়ত প্রত্যাশা ছিল, একটি স্থিতীশীল সরকারের। আদর্শবাদী অভ্যুত্থান আর বিপ্লবের কথা শুনতে শুনতে ক্লান্তিও ভর করে থাকতে পারে। তাই সেই সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও জিয়াউর রহমান'র কঠোর পদক্ষেপ এক ধরণের গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে থাকতে পারে।
আর ক্ষমতায় থেকেও জিয়াউর রহমান এক দিনে বিএনপি গঠন করেননি, সময় নিয়েছেন প্রায় দেড় বছর।
এই দেড় বছর সময়টাতে জনগণ রাজনীতির এক ভয়াবহ শূণ্যতা দেখেছিল। বামপন্থী কোন দল সামরিক শাসনবিরোধী কোন আন্দোলন করেনি, মাওলানা ভাসানি'ও ছিলেন নিশ্চুপ। জামাত মাত্রই সংগঠিত হতে শুরু করেছিল নতুন করে। সেই শূন্যতাকে পূরণ করার জন্য বিএনপি'র সেই সময়ের ঘোষণা হয়ত মধ্যবিত্ত, ব্যবসায়ী আর শিল্পপতিদের আশ্বস্ত করে থাকতে পারে।
চট করে দেখা যাক, ১৯৭৫ থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠার দিন পর্যন্ত ঘটনার টাইমলাইন-
- ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ঃ কর্ণেল তাহের আর জাসদ সমর্থিত অভ্যুত্থানে মুক্ত হলেন জিয়াউর রহমান
- ১১ নভেম্বর, ১৯৭৫ঃ জিয়াউর রহমান সায়েম সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেলেন
- ২১ নভেম্বর, ১৯৭৬ঃ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে রাষ্ট্রপতি সায়েম বলেন, নির্ধারিত সময়ে সাধারণ নির্বাচন হবে না।
- ৩০ নভেম্বর, ১৯৭৬ঃ বিচারপতি সায়েম'কে জিয়া বাধ্য করেন তাকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে (দৈনিক সংবাদ, ১ ডিসেম্বর)
- ২১ এপ্রিল, ১৯৭৭ঃ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সায়েম'র পদত্যাগ এবং জিয়াউর রহমান'র রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ (দৈনিক ইত্তেফাক, ২২ এপ্রিল)
- ৩০ মে, ১৯৭৭ঃ জিয়াউর রহমান সরকারের উপর জনগণের আস্থা নির্ধারণের জন্য গণভোট আয়োজন। ভোটার উপস্থিতি ৮৮.৫%; হ্যাঁ জয়ী হয় ৯৮.৯% ভোটে।
- ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৭ঃ একটি জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের রূপরেখা হাজির করেন জিয়াউর রহমান (বলেন- দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইলে যোগ্যতর ব্যক্তিদের কাছে দেশ গড়ার দায়িত্ব ছাড়িয়া দিব) [দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ ডিসেম্বর]
- ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ঃ 'জাগদল' (জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল) গঠনের কথা প্রথম পত্রিকায় আসে। জিয়াউর রহমান দলটি গঠন করেন কিন্তু চেয়ারম্যান হলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার
- ২২ ফেব্রুরারি, ১৯৭৮ঃ 'জাগদল' রাজনীতি করার সরকারি অনুমতি পায় (দৈনিক সংবাদ, ২৩ ফেব্রুয়ারি)
- ২৮ এপ্রিল, ১৯৭৮ঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা
- ১ মে, ১৯৭৮ঃ 'জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট' গঠিত; চেয়ারম্যান হলেন জিয়াউর রহমান
- ৩ জুন, ১৯৭৮ঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৭৬.৩৩ ভাগ ভোট পেয়ে জিয়াউর রহমান নির্বাচিত
- ২৮ আগস্ট, ১৯৭৮ঃ 'জাগদল'র সকল নেতাকর্মীর রাষ্ট্রপতি প্রস্তাবিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা (দৈনিক সংবাদ, ২৯ আগস্ট)
- ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮ঃ 'বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল' বিএনপি'র আত্মপ্রকাশ
১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি'র আত্মপ্রকাশ ঘটে। এখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার দল গঠনের জন্য যে ব্যাখ্যা দেন, তা হল-
-
"এই দেশে কেবল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনীতি হইতে হইবে। গত কয়েক বৎসর যাবত অন্য চেষ্টাও হইয়াছে। কিন্তু জনগণ তা গ্রহণ করে নাই… এমন কর্মসুচী গ্রহণ করিতে হইবে, যাহাতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হইতে পারে।" (দৈনিক ইত্তেফাক, ২ সেপ্টেম্বর)।
এরপর প্রেসিডেন্ট জিয়া বলেন,
- "নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থান সফরকালে আমি দেখিয়াছি জনগণ জাতীয় ঐক্য চান। এই বিষয়ে আমি রাজনৈতিক বন্ধুবান্ধবদের সাথে আলাপ আলোচনা করিয়াছি। তাহারাও এক দলে অন্তর্ভুক্ত হইয়া জাতীয় জীবনে পরিবর্তন চান… তাই আজ বর্তমান ইতিহাসের প্রেক্ষিতে নূতন দল সংগঠিত করা হইতেছে, যাহাতে সকল দেশপ্রেমিক ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা যোগ দিতে পারিবে।" (প্রাগুক্ত)
সংবাদ সম্মেলনের পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে জিয়াউর রহমানের প্রতিটি উত্তর ছিল সংক্ষিপ্ত এবং প্রাসঙ্গিক। এর একটি নমুনা দেয়া হল-
-
প্রশ্নঃ বিবিসি'র খবরে বলা হয়েছে, আপনি শেখ মুজিবকে জাতির পিতা করার চিন্তাভাবনা করছেন, এ সম্পর্কে বক্তব্য কি?
- উত্তরঃ দেশের অনেক বিষয় নিয়েই চিন্তা ভাবনা করছি। প্রশ্নঃ বঙ্গভবনে শেখ মুজিবের ছবি টাঙ্গানো হয়েছে, কথাটা কি ঠিক?
- উত্তরঃ হ্যাঁ, তা ঠিক। প্রশ্নঃ তাহলে ঢাকার রাস্তায় পুলিশ তাঁর ছবি ছিঁড়ে ফেলে কেন?
- উত্তরঃ কোন পুলিশ ছিঁড়েছে বলতে পারবেন। আমি তো অন্যান্য অনেক পোস্টারই এখন ঢাকায় দেখি না। আর বাইরে অনেক জায়গায়ই তো আমি শেখ মুজিবের পোস্টার অক্ষত দেখেছি। প্রশ্নঃ বিশেষ করে শেখ মুজিবের পোস্টার ছেঁড়ার ব্যাপারে আপনার কোন নির্দেশনা আছে কি?
- উত্তরঃ কোন পোস্টার লাগানোর ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। (দৈনিক সংবাদ, ২ সেপ্টেম্বর)
এই মিতভাষ, ঘোষণাপত্রে 'জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ' আর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আহ্বানে এক নতুন রাজনীতির শুরু হয়েছিল সেই দিন।
২। জিয়াউর রহমান'র সময়ে বিএনপি

বিএনপি'র রাজনীতি নতুন, এই কথা বলার অর্থ এই নয় যে, সেটা রেডিক্যাল। নতুন এই অর্থে যে, এইভাবে দল গঠন আর দল বিস্তার, এই অঞ্চলের ইতিহাসে প্রথম।
সামরিক শীর্ষ ব্যক্তি আসলেন দেশের সংকটে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব নিয়ে, যার কোন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছিল না।
সেই তিনিই শুধু রাজনীতিতে এলেন না, দল গঠন করলেন এবং 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ' এর ব্যানারে একে একে জড়ো করলেন বিচিত্র সব রাজনৈতিক নেতাদের। তিনি সাথে পেয়েছেন শাহ আজিজুর রহমান, মওদুদ আহমেদ এর মত ডানপন্থীদের; একই সাথে পেয়েছেন কাজী জাফর, অলি আহাদ, এর মত বামপন্থীদের।
তাঁর শাসনকালের শুরু থেকেই একটা ম্যাজিক ওয়ার্ড কাজ করত- 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ'। এটা ইতোপুর্বে আওয়ামী লীগের 'বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের' কাউন্টার ন্যারেটিভ; কিন্তু একই সাথে এই জাতীয়তাবাদ অনেক বেশি জোর দিয়েছিল মুসলমান নাগরিকদের আবেগকে মূল্য দেয়ার ব্যাপারে। বিএনপি'র ক্ষমতা আরও সংহত হয়, যখন ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচনে। ২০৭ টি আসন নিয়ে সে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তার আগে ৬ ফেব্রুয়ারি, তুলে নেয়া হয়েছিল সামরিক আইন, ১৯৭৫ এর আগস্টের পরে এই প্রথম। তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি'র শাসন আসলে সত্যিকার অর্থে শুরু এই সময়ের পরে।
রাজনৈতিক দলগুলোও আস্তে আস্তে মাঠে নামতে থাকে।
আওয়ামী লীদের দুই অংশ আর বামপন্থীদের একটা জোটও গঠিত হয় ১৯৮০ সালের শুরুতে। এদের দমনও করা হয়েছিল যথেষ্ট শক্ত হাতে।
সেই সময় দলটি তার যে সব সাফল্যের কথা নিজেদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করে, এগুলোকে মোটা দাগে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নেয়া যায়।
- ক। মুসলিমদের অগ্রাধিকার- সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন, 'আল্লাহর প্রতি আস্থা' শব্দগুলো যোগ করা, ইসলামী দেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন, মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী যোগাযোগ
- খ। বাংলাদেশী পরিচিতি- আদিবাসীদের 'বাঙ্গালী' হতে বাধ্য না করে রাষ্ট্রীয় পরিচয় দেয়া
- গ। অর্থনীতিতে গতি- প্রাইভেট সেক্টরকে উৎসাহিত করা, গার্মেন্টস ব্যবসার শুরু, যুব শিক্ষার প্রসার, পাট ব্যবসার প্রসার, খাল খনন ও কৃষি সংস্কার
- ঘ। প্রশাসনে সংস্কার- পুলিশ ও সেনা সদস্য বৃদ্ধি, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন, গ্রাম সরকার ব্যবস্থা
'ক' এবং 'খ' অর্জনগুলোর প্রচার বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে বিএনপি'কে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল। হানাহানির রাজনীতির বিপরীতে ঐক্যের আহ্বান আর দৃশ্যত সেই ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা ছিল বিএনপি'র।
কিন্তু 'গ' অর্জনের তাৎপর্য আরও বিস্তৃত। উঠতি ধনী ব্যবসায়ীরা এই দলকে সমর্থন যুগিয়েছিল। আওয়ামী লীগের জাতীয়করণের বিপরীতে পুঁজির নিরাপত্তা আর স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য তারা এই রাজনীতিকে নিরাপদ মনে করেছিল।
ফলে, অর্থ আর ধর্মীয় আবেগ অনেক শক্ত করে গেঁথে দিতে পেরেছিল বিএনপি'র শেকড়; এর সাথে যুক্ত হয়েছিল সামরিক সমর্থন।
৩। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি

১৯৮৬ সালের ৭ মে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গেল, কিন্তু বিএনপি গেল না। এই এক ঘটনায় বেগম জিয়া'র ভাবমূর্তি নতুন করে তৈরি হল; সবাই তাকে জানলেন আপোষহীন নেত্রী হিসেবে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন ১৯৮১ সালের ৩০ মে।
আর সামরিক বাহিনীর প্রধান এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। এই ১০ মাস কিন্তু দৃশ্যত ক্ষমতায় বিএনপি'ই রইল। উপ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার হন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার তোড়জোড় শুরু হয়। শুরুতে ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সেটা পিছিয়ে যায় ১৫ নভেম্বরে।
এই সময় সবাই বেগম খালেদা জিয়া'কে প্রার্থী হতে অনুরোধ করলেও, তিনি রাজি হননি। ফলে, অশীতিপর বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার-ই প্রার্থী হলেন এবং ২৬ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেও আসলেন। তিনি পেয়েছিলেন ৬৫% ভোট। তাঁর কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. কামাল হোসেন; তিনি পেয়েছিলেন ২৬% ভোট।
এই আব্দুস সাত্তার-ই ১৯৮২ সালের জানুয়ারিতে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে যান। তাঁর বয়স তখন ৭৬ বছর।
এই তথ্য দুটো বিষয় তুলে ধরে।
এক। নিহত জিয়া'র প্রতি মানুষের সহানুভূতির প্রতিফলন ঘটেছিল নির্বাচনে
দুই। বিএনপি'তে যে পরবর্তী শক্তিশালী কোন নেতৃত্ব নেই, সেটাও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল
তাই ১৯৮২-এর ২৪ মার্চ এরশাদ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মাত্র ৩ মাস আগে নির্বাচিত একটি সরকারকে যখন অপসারণ করে, তখন কোন প্রতিরোধ তৈরি হল না। বরং বিএনপি'র কিছু নেতা এরশাদের মন্ত্রিসভায় গিয়ে যোগ দেয়। নিষ্ক্রিয় হয়ে যান দলের সভাপতি আব্দুস সাত্তার। দলের নেতাদের মধ্যে তখন বিরোধ প্রবল। এই শূন্যতায় রাজনীতিতে এলেন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৮৩ এর মার্চে প্রথমে সিনিয়র ভাইস চেয়েরম্যান; আর তারপরে ১৯৮৪ সালের ১০ মে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। শুরু হয় বিএনপি'র আরেক অধ্যায়।
সক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এরশাদের সময় লেগে যায় প্রায় তিন বছর। ১৯৮৫ এর মার্চে আস্থা ভোট নিয়ে নিজের অবস্থানের যৌক্তিকতা তৈরি করেন। আর তারপরই জোরেশোরে উদ্যোগ নেন স্থানীয় পরিষদ আর সংসদ নির্বাচনের।
সবাই ভেবেছিল, বিএনপি এইবার ধ্বংস হয়ে যাবে। বেগম জিয়া'র মত অনভিজ্ঞ মানুষ কখনই হাল ধরতে পারবেন না। কিন্তু বেগম জিয়া শক্ত অবস্থান নিলেন। বহিষ্কার করলেন শাহ আজিজুর রহমান আর মওদুদ আহমেদ এর মত নেতাদের। এবং স্পষ্ট অবস্থান নিলেন এরশাদের অধীনে নির্বাচনের বিরুদ্ধে।
১৯৮৬ সালের ৭ মে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গেল, কিন্তু বিএনপি গেল না। এই এক ঘটনায় বেগম জিয়া'র ভাবমূর্তি নতুন করে তৈরি হল; সবাই তাকে জানলেন আপোষহীন নেত্রী হিসেবে। এর মধ্যে বিএনপি যেমন আবার ভাঙ্গনের মুখে পড়েছিল, তেমনি বহিষ্কৃত বেশ কিছু নেতাও বেগম জিয়া'র আনুগত্য মেনে আবার ফিরেও এসেছিল। এটা তাঁর রাজনৈতিক দৃঢ়তাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে দেয়।
ততদিনে দলটির ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন মজবুত হয়ে উঠেছে। কিন্তু, ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পরে যখন নির্বাচন ঘনিয়ে এল, বিএনপি রইল আন্ডারডগ হয়ে। সবাই-ই ভেবেছিল, জিততে চলেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল সব হিসেব নিকেশ পাল্টে দিয়েছিল। বিএনপি পেয়ে গেল ১৪০ আসন, আওয়ামী লিগ পেল মাত্র ৮৮ টি। শেখ হাসিনা ৩ টিতে দাঁড়িয়ে হারলেন ২ টি আসনে, আর বেগম জিয়া জিতলেন ৫ টি আসনেই।
একটা নতুন বিষয় উঠে এল এই ফলাফলে। সাংগঠনিক শক্তি বিচারে আওয়ামী লীগ যে সেই সময় অনেক শক্তিশালী ছিল, তা নিয়ে আসলেই কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু কোনভাবে বিএনপি'র গ্রহণযোগ্যতা ততদিনে বেড়ে গেছে অনেক। প্রসঙ্গত, এই প্রথম লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হল বিএনপি'র। আর ভোটের হার দেখা গেল, দুই দলেরই খুব কাছাকাছি (৩০ এর ঘরে)।
এটাই তাৎপর্যপূর্ণ।
আওয়ামী লীগ আন্দোলনে গড়ে উঠা দল, বিএনপির চেয়ে ৩৯ বছরের পুরনো দল। কিন্তু বিএনপি এখন তার সমান ভোট টানছে!
এই সময় থেকে আসলে এক ধরনের 'দ্বি-দলীয়' ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দেখা যায়। হয়ত এর পেছনে ছিল বড় ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার স্বার্থ। হয়ত তারা মনে করছিল, ৫ বছর করে দলগুলো ক্ষমতা ভাগ করে নিলে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা বেশি নিশ্চিত হবে।
৪। সরকার হিসেবে বিএনপি

দুই দফায় সরকারে ছিল বিএনপি। দুইবারই তার সামনে ফ্যাক্টর হিসেবে হাজির হয় জামাত এ ইসলামী।
দুই দফায় সরকারে ছিল বিএনপি। দুইবারই তার সামনে ফ্যাক্টর হিসেবে হাজির হয় জামাত এ ইসলামী। প্রথমবারে ঐ দলের সমর্থনে সরকার গঠন করে। দ্বিতীয়বারে ঐ দলকে সাথে নিয়েই সরকারে যায় বিএনপি।
জামাতের সাথে গড়ে উঠে তাদের অম্ল মধুর সম্পর্ক।
একদিকে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে দেশে আসা জামাতের আমির গোলাম আজমকে ভিসার মেয়াদের বেশি দেশে থাকার কারণে গ্রেপ্তার করেছে, আবার তার ফাঁসির দাবি চাওয়া গণ আদালতের বুদ্ধিজীবীদের দমন করার চেষ্টা করেছে কঠোর হাতে। যদিও দলের অবস্থান পাল্টে সংসদীয় ব্যবস্থা মেনে নেয়ার মত কাজ করে প্রশংসিত হয়েছিল; কিন্তু মিত্রদের সাথে দূরত্ব, সংসদে একের পর এক অনাস্থা প্রস্তাব, আওয়ামী লীগের তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে কঠোর আন্দোলন- সব মিলে আসলেই বিএনপি প্রথম দফা সরকারে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমলারা পর্যন্ত বেঁকে বসায় পদত্যাগ করতে হল দলটিকে। ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ তত্বাবধায়ক সরকার আইন পাশ করে বিদায় নেয় সরকার।
এই সরকারের পুরো সময়টায় দলটির সাংগঠনিক শক্তির অভাব খুব করে চোখে পড়েছে। আর ক্ষমতায় থাকলে অজনপ্রিয়তা প্রায় অবশ্যম্ভাবী।
ফলে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ভোট পেল ৩৩.৬১%। আসন ১১৬।
বিপরীতে আওয়ামী লীগ পেল ৩৭.৪৪%; আসন ১৪৬।
২০০১ এ এসে দেখা গেল আবার বিএনপি ভোট টেনেছে ৪০.৯৭%। আসন ১৯২। আর আওয়ামী লীগ ৪০.১৩% ভোট পেয়েও আসন মাত্র ৬২!
এইবার নির্বাচিত হওয়ার পরে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, জঙ্গিদের উত্থান, র্যাব গঠন, অপারেশন ক্লিনহার্ট, হাসিনা'র উপর গ্রেনেড হামলা, সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা- সব মিলিয়ে বেশ কাহিল অবস্থা হয়ে গিয়েছিল জোট সরকারের। পাশাপাশি দশ ট্রাক অস্ত্র পাচারের ঘটনার সাথে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রীদের যোগাযোগ পরিষ্কার হয়ে গেলে আরও বেকায়দায় পড়ে যায়। এমনকি বিএনপি তার ওয়েবসাইটেও এই সময়ের সাফল্য উল্লেখ করতে গিয়ে খুব কংক্রিট কিছু উপস্থাপন করতে পারেনি।
এই সময়ে তাদের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ছিল- মেয়েদের বিনামূল্যে পড়া নিশ্চিত করা, নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মাণ ইত্যাদি।
আর এই সময় তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর যেসব অভিযোগ তৈরি হয়, সেগুলো হল-
- সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অস্ত্র পাচার আর সোনা চারচালানে যুক্ত থাকা
- নাজমুল হুদা'র দুর্নীতি
- মোসাদ্দেক আলী ফালু'র দুর্নীতি
- বিদ্যুৎ খাতে ইকবাল হাসান মাহমুদ'র দুর্নীতি
- রুহুল কুদ্দুস দুলু'র, ইসলামী জঙ্গি বাংলা ভাই'কে প্রশ্রয় দেয়া
- মীর মোহাম্মদ নাসির'র সৌদিদের সাথে অর্থ ও বার্তা আদান প্রদান
- নাসের রহমান'র দুর্নীতি
- তারেক রহমান'র হাওয়া ভবন ও দুর্নীতি
সরকারের এই দফায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং অপরাপর গণসংগঠনগুলো ছিল অনেক আগ্রাসী আর সাংগঠনিকভাবে অনেক সতর্ক।
২০০৬ এ ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় বিএনপি সহ চার দলীয় জোট তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন'কে নিয়োগ দিলে ভয়াবহ সঙ্ঘর্ষের শুরু হয়। সেই সঙ্ঘর্ষ চলতে থাকে ২০০৬ এর অক্টোবর থেকে তিন মাস পর্যন্ত। এই সময় যত মুখোমুখি লড়াই হয়েছিল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জয় হয়েছিল আওয়ামী লীগের। সাংগঠনিক শক্তিতে তারা কতটা সুসংহত, সেটা প্রমাণের পরে পরের নির্বাচনে প্রভাব রাখা বিএনপি'র আরও জরুরী হয়ে পড়ে। আর সেই অচালবাস্থার ফলেই এল সেনা সমর্থিত সরকার; যার কার্যকর পরিচালক ছিলেন সামরিক বাহিনীর প্রধান মইন ইউ আহমেদ।
৫। মইন ইউ আহমদের সময়ে বিএনপি

সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল মাইনাস টু ফর্মুলা।
সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল মাইনাস টু ফর্মুলা। দুই দলের জোটভিত্তিক একগুঁয়ে অবস্থান পাল্টানোর জন্য পরিবারতন্ত্রের অবসান জরুরী, এটাই ছিল উপলব্ধি। সরকারী ইন্ধনে বিদ্রোহ হয়েছিল দুটো দলেই। কিন্তু শেখ হাসিনা যতটা সামাল দিতে পেরেছেন, খালেদা অতটা নন।
এর প্রধান কারণ হয়ত, মাত্রই ক্ষমতা ছেড়ে আসার কারণে নানান সংক্ষুব্ধ অংশের চাপ। আর দ্বিতীয় কারণ, তার পরের নেতৃত্ব হিসেবে প্রস্তুত হওয়া তারেক রহমান'র বেকায়দায় পড়ে যাওয়া। অনেকেই মনে করেন, সেই সময়ের সরকার খালেদা জিয়া ও বিএনপির ব্যাপারে বিশেষভাবে বৈরি ছিল (বণিকবার্তাঃ https://tinyurl.com/kvsts5z4)।
বিএনপি'র শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যারা খালেদা'র সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন, তাদের মধ্য ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা, সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, শেখ রাজ্জাক আলি প্রমুখ। খালেদা এত খেপেছিলেন যে, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া'কে বহিষ্কার করে দেলোয়ার হোসেন'কে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করেন। তিনি নিজে গ্রেপ্তার ছিলেন এক বছর সাত দিন। সব কিছু মিলে সাংগঠনিকভাবে ভাল বিপর্যয়ে পড়ে বিএনপি। এই বিপর্যস্ত অবস্থাতে ২০০৮ এর নির্বাচনের প্রস্তুতি তাদের ভাল হয়নি। তারেক জিয়া'কে বাইরে রেখে ইলেকশনে যাবেন কি নাবেন না, এই সিদ্ধান্ত নিতেই অনেক দিন চলে গিয়েছিল। ১৩ ডিসেম্বর তাদের ৩৬ দফা ইশতেহারের মূল স্লোগান ছিল- 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও'।
২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফল ছিল বেশ চমকে দেয়ার মতই। আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪% ভোট পেয়ে জিতেছে ২৩০ টি আসনে। আর বিএনপি ৩২.৫% ভোট পেয়ে পেয়েছে ৩০ টি আসন।
৬। আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি

২০২৪ পর্যন্ত বিএনপি'র নিজেদের হিসেব অনুযায়ী- "দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গত সাড়ে ১৭ বছরে মামলা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ, আসামী করা হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতা হারিয়ে বিএনপি ভালই বেকায়দায় পড়েছিল। আওয়ামী দমন পীড়নে রাজপথে তাদের অবস্থান দিনকে দিন কঠিন হয়ে পড়ে। তাই পার্বত্য শান্তি চুক্তি যখন হল, এর প্রবল বিরোধিতা করলেও কার্যকর আন্দোলন আর দাঁড় করতে পারেনি। ১৯৯৮ সাল থেকেই শুরু হয়ে যায় সংসদ থেকে পদত্যাগের আয়োজন। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯, এই তিন বছর বিএনপি হরতাল করেছিল ২৪৪ টি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হরতালগুলো পালনে নেতাকর্মীরা রাজপথে দাঁড়াতেই পারতেন না।
কিন্তু নির্বাচনে আবারও সেই অবাক চিত্র। ভোট পেলেন ৪০.৯৭%। আবারও প্রমাণ হয়, সংগঠন নয়, বিএনপি ভোট টানে স্বতসস্ফুর্ত জনসমর্থনে।
এরপর মইন ইউ আহমেদ এর কাল পেরিয়ে আবার ২০০৯ এ বিরোধী দলের ভূমিকায় বিএনপি। সংসদে আসন মাত্র ৩০; দল বিপর্যস্ত।
২০২৪ পর্যন্ত বিএনপি'র নিজেদের হিসেব অনুযায়ী- "দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গত সাড়ে ১৭ বছরে মামলা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ, আসামী করা হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে। সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে এবং ক্ষমতাসীনদের হাতে ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ১ হাজার ৫৫১ জন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে হত্যা হয়েছে ৮৩৭ জন নেতাকর্মী। এই সময়ে ১ হাজার ২০৪ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ গুম হয়েছেন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে গ্রেফতার দেখানো হয় ৭৮১ জনকে এবং বিএনপির গুম ছিল ৪২৩ জন। এখনো দলটির ৭২ জন নেতাকর্মী গুম রয়েছেন। যাদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের ১৫৭ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। এই সময়েও সারাদেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।" (https://shorturl.at/OQdBg)
বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করে, আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত শক্তিশালী আন্দোলন তারা গড়ে তুলতে পারেননি, এটা হয়ত সত্য। কিন্তু এর মধ্যে তাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হল, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দলের ঐক্য বজায় রাখা। গত ১৫ বছরে বিএনপি ভাঙেনি একবারও।
সবাই ভেবছিল খালেদা জিয়া আর তারেক জিয়া'র অনুপুস্থিতিতে বিএনপি 'নেই' হয়ে গেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে যেভাবে এলাকায় এলাকায় ফিরে এসেছে কর্মীরা, আবার স্লোগান তুলছে, এটা রীতিমত বিস্ময়ের ব্যাপার। এখন তো আগামী নির্বাচনে এই দল ছাড়া আর কেউ জিতবে, তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ছয় কালের নির্যাস
এই যে ছয় কালের বিশ্লেষণ হল, এখানে ব্যবসায়ী ফ্যাক্টর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রতাপ বাড়তে শুরু করেছে ১৯৯০ এর পর থেকে। ১৯৭৩ এর সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন ২৪%। ১৯৯১ এর নির্বাচনে এই হার হল ৫৩%। বিএনপি থেকে যারা প্রার্থী হন, তাদের মধ্যে স্থানীয় ও মাঝারি ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি (প্রথম আলো - https://tinyurl.com/4fmbbw5d) । ২০২১ সালের নির্বাচনে বিএনপি'র প্রার্থীদের ৮৭% ই ছিল ব্যবসায়ী (আওয়ামী লীগের ৭৩%)।
ভোটের রাজনীতির জন্য এই পরিসংখ্যান মাথায় রাখতেই হবে।
কিন্তু এটাই সব নয়।
আওয়ামী লীগের সমান্তরালে কোন দলের কোন কর্মসুচীই দীর্ঘমেয়াদে জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৯৯০ এর পরে বিএনপি'র-ও কোন বড় আন্দোলন তৈরির রেকর্ড নেই। তাই আমরা কি ধরে নিতে পারি, ভোটের রাজনীতির সমীকরণে আন্দোলন ফ্যাক্টর অতটা শক্তিশালী নয়? তার থেকেও বড় হয়ে দাঁড়ায়, এলাকায় ক্ষমতা কাঠামোর ডিনামিক্স আর সেখান থেকে সবেচেয়ে চতুর লোকটাকে বেছে নেয়ার দক্ষতা?